সামাজিক গোষ্ঠী কাকে বলে ? সামাজিক গোষ্ঠীর প্রকারভেদ আলোচনা কর। Discuss the type of Social Group

সামাজিক গোষ্ঠী কাকে বলে ? সামাজিক গোষ্ঠীর প্রকারভেদ আলোচনা কর। ( Discuss the type of Social Group.)




{tocify} $title={Table of Contents}

সামাজিক গোষ্ঠী :

সামাজিক গোষ্ঠী প্রসঙ্গে অধ্যাপক জিহ্বার্ট বলেছেন - সামাজিক গোষ্ঠী হল এক ধরণের ব্যক্তির সমষ্টি যারা একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের মধ্যে একে
অপরের উপর নিয়ন্ত্রণ ও নির্ভরশীলতা বজায় থাকে।

অধ্যাপক ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে যখন কতকগুলি ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি একত্রিত হয় এবং নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক বজায় রাখবে ও সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, তাকে সামাজিক গোষ্ঠী বলে।

সামাজিক গোষ্ঠীর প্রকারভেদ :

সামাজিক গোষ্ঠীকে কতকগুলি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। মরিস জিন্সবার্গের মতে বিভিন্নভাবে সামাজিক গোষ্ঠীগুলির শ্রেণীবিভাজন করা হয়। এক্ষেত্রে তিনি আঞ্চলিক বন্টন, গোষ্ঠী ভিত্তি হিসেবে সম্পর্কের ব্যাপ্তি, প্রিয় প্রকৃতির কথা বলেছেন।

১. সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রকৃতির ভিত্তিতে শ্ৰেণীবিভাজন :


সামাজিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত সদস্যদের মধ্যেকার সম্পর্কে সমস্ত ক্ষেত্রে অভিন্ন প্রকৃতির থাকে না। গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রকৃতির ভিত্তিতে সামাজিক গোষ্ঠীকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
ক. প্রাথমিক গোষ্ঠী (Primary Group) এবং
খ. গৌণ গোষ্ঠী (Secondary Group)

ক. প্রাথমিক গোষ্ঠী :

প্রাথমিক গোষ্ঠী হল অল্পসংখ্যক মানুষের সংগঠন। প্রাথমিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদ ন্যদের মধ্যে প্রত্যক্ষ, ব্যক্তিগত, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহানুভুতির সম্পর্ক থাকে। প্রত্যক্ষ অথবা মুখোমুখি সম্পর্কের জন্যই প্রাথমিক গোষ্ঠীকে মুখোমুখি গোষ্ঠীও বলা যায়। প্রাথমিক গোষ্ঠীর উদাহরণ হিসেবে পরিবার, খেলার দল প্রভৃতির কথা বলা যায় । সমস্ত প্রাথমিক গোষ্ঠীই সমাজে সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া এরূপও বলা যায় প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলি হল সামাজিক সংগঠনের মৌল উপাদান। অধ্যাপক জিসবার্ট বলেছেন "The Primary or face to face group is based on direct personal contact, in which the members deal immediately with one another."

খ. গৌণ গোষ্ঠী : 
গৌণ গোষ্ঠী হল উদ্দেশ্যযুক্ত গোষ্ঠী। এই সকল গোষ্ঠীর সাংগঠনিক দিকটিই হল প্রধান। গোণ গোষ্ঠীর সদস্যরা পরস্পরের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত থাকে না। গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ, মুখোমুখি বা ঘনিষ্ঠতা থাকে না। গৌণ গোষ্ঠীগুলির অস্তিত্ব এবং ভূমিকা আধুনিক সমাজব্যবস্থায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গৌণ গোষ্ঠী বৃহৎ আকারের হয়। যেমন- রাজনৈতিক দল, পৌরসভা, শ্রমিক সংঘ প্রভৃতি। অধ্যাপক ডেভিস (Kingsley Davis ) বলেছেন। "Secondary groups can be roughly defined as the opposite of everything already said about primary groups."

বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনেই এই ধরণের গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। 

২. সদস্যপদ গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেণীবিভাজন : 
সামাজিক গোষ্ঠী সদস্যপদ গ্রহণ বা গ্রহণ না করা এবং সামাজিক গোষ্ঠীর প্রতি মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক গোষ্ঠীকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা - 
ক. অন্তগোষ্ঠী (In group) এবং 
খ. গোষ্ঠী (Out group)

ক. অন্তগোষ্ঠী : 
অন্তগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের মধ্যে গভীর মমতার এষ এবং নিধিড় সম্পর্ক বর্তমান থাকে। অন্তগোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের নিজেদের মধ্যে গভীর অন্তরঙ্গতার ও আন্তরিকতার গভীর সম্পর্কের বাঁধনে আবদ্ধ থাকে। অন্তর্গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে আমরা বোধ মনোভাব বিদ্যমান থাকে। যেমন। পাড়া প্রতিবেশী, পরিবার, ক্লাব প্রভৃতি।

খ. বহিগোষ্ঠী : 
বহিগোষ্ঠীর অন্তর্গত সদস্যদের মধ্যে এইরূপ চেতনা থাকে আমরা এবং

তারা বা অন্যান্যরা। যে সকল গোষ্ঠীর প্রতি আমাদের বিরূপ মনোভাব থাকে আমরা সেই গোষ্ঠীর সদস্য নয়। তাছাড়া শত্রুতার মনোভাব থাকে তাকেই বলা হয় বহিগোষ্ঠী। যেমন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিমের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের সম্পর্ক হল বহিগোষ্ঠির সম্পর্ক।

৩. স্থায়িত্বের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেণীবিভাজন : স্থায়িত্বের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক গোষ্ঠীকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - 

ক. স্থায়ী গোষ্ঠী (Permanent Group) এবং
খ. অল্পকাল স্থায়ী গোষ্ঠী।

স্থায়ী গোষ্ঠীর উদাহরণ হল পরিবার, জাতি, শ্রেণী।

অল্পকাল স্থায়ী গোষ্ঠীর উদাহরণ হল ভিড়, শ্রোতৃমণ্ডলী প্রভৃতি।

৪. সদস্যদের পদমর্যাদার ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাজন : সামাজিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক সদস্যদের পদমর্যাদার ভিত্তিতে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা - 

ক. উলম্ব গোষ্ঠী (Vertical) এবং
খ. সমতল গোষ্ঠী (Horizontal Group)

৫. বিধি-নিষেধের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাজন : সামাজিক গোষ্ঠীর কর্মপদ্ধতি ও বিধি নিষেধের ভিত্তিতে সামাজিক গোষ্ঠীকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা - বিধিবন্ধ গোষ্ঠী (Formal Group) এবং

অবিধিবদ্ধ গোষ্ঠী (Informal Group)

বিধিবন্ধ গোষ্ঠীর সদস্যদের আচার-আচরণ, কাজকর্ম প্রভৃতি সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুনের = দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এক্ষেত্রে উদাহরণ হল কলেজের শ্রেণীকক্ষ। অন্যদিকে অবিধিবদ্ধ কলেজের কমনরুম।

প্রা

নিয়মকানুনে কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যেমন

৬. সদস্যপদ গ্রহণের ইচ্ছার ভিত্তিতে বিভাজন : সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্য হওয়া

■ বা না হওয়া ইচ্ছাধীন কিনা তার পরিপ্রেক্ষিতে দুভাগে ভাগ করা যায়।

ঐচ্ছিক গোষ্ঠী (Voluntary Group) এবং

অনৈচ্ছিক গোষ্ঠী (Involuntary Group)

৭. আয়তনের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ : আয়তনের ভিত্তিতে সামাজিক গোষ্ঠীকে

দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা

যুগল গোষ্ঠী (Dyad Group) এবং

ত্রয়ী গোষ্ঠী (Triad Group)

যুগল গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত হয়। যেমন স্বামী-স্ত্রী। তিনজন

ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত গোষ্ঠীকে ত্রয়ী গোষ্ঠী বলে।

৮. সম্পর্কের প্রকৃতি অনুসারে বিভাজন

ও সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের

প্রকৃতির ভিত্তিতে বিভা হল -

(Community)

সংঘ (Association)

উপরিউক্ত শ্রেণীবিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় সমাজ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক গোষ্ঠীর বিভাজন করেছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post