সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান - Sociology and Anthropology

সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান - Sociology and Anthropology


<b>{tocify} $title={Table of Contents}</b> 

সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান : 

নৃবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনার আর্গে নৃবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে কিছু কথা বলা প্রয়োজন ।অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের মত নৃবিজ্ঞানের সাথেও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। নৃবিজ্ঞান হল মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। মানুষের সামগ্রিক অধ্যয়ন বিষয়ক বিজ্ঞানকেই বলা হয় নৃবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর মত নৃবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুও অত্যন্ত ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময় নৃবিজ্ঞানকে প্রধানত দৈহিক নৃবিজ্ঞান ও সামাজিক তথা সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান এই দুই শাখায় বিভক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে যাকে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান বলা হয় তাকেই যুক্তরাজ্যে সামাজিক নৃবিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করা হয়। প্রথমটিতে সংস্কৃতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, আর দ্বিতীয়টিতে সামাজিক সংগঠনের উপর অধিকতর জোর দেওয়া হয়। দৈহিক নৃবিজ্ঞান বিভিন্ন জাতি বা গোষ্ঠীর দৈহিক বৈশিষ্ট্য, তাদের জৈবিক দিক এবং তাদের উপর পরিবেশগত উপাদানের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।

সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান উভয়ই আধুনিক বিজ্ঞান এবং দুই বিজ্ঞানই উনবিংশ শতাব্দীতে বিকাশ লাভ করে। উভয় বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। সামাজিক নৃবিজ্ঞান আদিম মানব সমাজের জীবনযাত্রার প্রণালী, তাদের ব্যবহারিক জীবনের বিভিন্ন দিক এবং তাদের আচার অনুষ্ঠান, ধর্মীয় জীবন এবং সামাজিক সংগঠন নিয়ে আলোচনা করে থাকে। সমাজবিজ্ঞানও আধুনিক সমাজের নানাবিধ সামাজিক সংগঠন, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি মানব সমাজের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব নিরূপণ করে। এ দুই বিজ্ঞানের মধ্যে বিষয়বস্তুগত সাদৃশ্য এতবেশী যে, এদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য খুঁজে বের করা দুরূহ ব্যাপার ।

যে মানুষকে নিয়েই যে সমাজ সেই সমাজের মানুষই হলো নৃবিজ্ঞানীদের আলোচ্য বিষয়।

নৃবিজ্ঞান মানুষের সামগ্রিক অধ্যয়ন বিষয়ক একটি বিজ্ঞান। মানুষের এমন কোন দিক নেই যা নৃবিজ্ঞানে আলোচিত হয় না ।

দৈহিক নৃবিজ্ঞান ছাড়া সমাজবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কিংবা সামাজিক নৃবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়বস্তু অনেক ক্ষেত্রে অভিন্ন। সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিকাশধারা আলোচনা করতে গিয়ে মানুষ সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করে। অপরদিকে সামাজিক নৃবিজ্ঞান আদিম মানুষ ও তাদের জীবনপ্রণালী নিয়েই আলোচনা ও গবেষণা করে ।

সামাজিক নৃবিজ্ঞান সহজ-সরল ও অনগ্রসর আদিম সমাজ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা করে। সমাজ বিজ্ঞান আধুনিক কালের নগর জীবন ও গ্রামীণ সমাজসম্পর্কে ব্যাখ্যা করে। মানুষের আদিম জীবনযাত্রার ইতিহাসই নৃবিজ্ঞানের আসল বিষয়বস্তু। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানে মানুষের অতীত ও বর্তমানের ঐতিহাসিক যোগসূত্র স্থাপিত হয়। জীবের ক্রমবিকাশ এবং প্রাণীরাজ্যে মানুষের অবস্থান নিয়ে নৃবিজ্ঞান সমীক্ষা চালায়। সমাজবিজ্ঞানের মূল বিষয় হল সমাজ, অপরদিকে নৃবিজ্ঞানের মূল বিষয় হল মানুষ ।

সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান উভয়েই মূল লক্ষ্য হল মানবসংস্কৃতির অনুশীলন। ক্ষেত্রের দিক থেকে শুধু পার্থক্য বিদ্যমান। সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য ক্ষেত্র সমকালীন সমাজ, আর নৃবিজ্ঞানের হল আদিম প্রাক্ আক্ষরিক যুগের মানুষ ও তার সংস্কৃতি। মানব সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিবর্তন উভয় বিজ্ঞানেরই অভিন্ন আগ্রহের বিষয়।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে নৃবিজ্ঞান প্রাণী হিসাবে মানুষের শুধু পর্যালোচনা নয়, সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের সংস্কৃতি নিয়েও গবেষণা করে। তাই নৃবিজ্ঞান হল মানুষের গবেষণামূলক বিজ্ঞান, আর সমাজবিজ্ঞান সমাজ সম্পর্কিত বিশ্লেষাণাত্বক বিজ্ঞান ।

Post a Comment

Previous Post Next Post