সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা দাও। সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা কর।

সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা দাও। সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা কর। (Define Sociology. Discuss the scope and subject matter of Sociology) অথবা সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা দাও। সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা কর।



<b>{tocify} $title={Table of Contents}</b>

ভূমিকা :

সমাজতত্ত্ব শাস্ত্রটি অপেক্ষাকৃত আধুনিক হলেও এর জন্মকালীন ইতিহাস খুব নগন্য নয়। সমাজতত্ত্ব বা Sociology পৃথক শাস্ত্র হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি পায় ১৮৩৯ সালে। সমাজবিজ্ঞানী অগস্ট কোঁত (Auguste Comte) তাঁর 'Course de positive philosophy' গ্রন্থে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।


সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা :

সমাজতত্ত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মরিস জিন্সবার্গ (M. Gibsherg) মনে করেন, সমাজতত্ত্ব হল মানুষের সকল পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও পারস্পরিক সম্পর্ক, তাদের সকল অবস্থা ও ফলাফল সম্বন্ধে আলোচনা।


সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে অধ্যাপক গিডিংস-এর মত :

অধ্যাপক গিডিংস (F.H.Giddings) বলেন, সমাজবিজ্ঞান হল মানুষের মানসিক সংযোগের বিজ্ঞান। সমাজতত্ত্ব বিশেষভাবে কার্যকারণ সম্পর্কিত ও সামাজিক ঘটনাগুলির ব্যাখ্যা, মানুষের ক্রিয়াকলাপ, সমাজের আঙ্গিক সামঞ্জস্য বিধান, শক্তি সংরক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক ঘটনার তাৎপর্য নিরূপণের বিজ্ঞান।


পরিধি ও বিষয়বস্তু : 

সমাজতত্ত্বের আলোচ্য ক্ষেত্রের পরিধি ও বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে সমাজতাত্ত্বিক মহলে মতপার্থক্য আছে। সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু ও আলোচনার পরিধি প্রসঙ্গে দুটি মতবাদ বিশেষ উল্লেখযোগ্য :-

১) বিশ্লেষণাত্মক মতবাদ এবং

২) সংশ্লেষাত্মক মতবাদ।


) বিশ্লেষণাত্মক মতবাদ :

 সমাজতত্ত্বের বিশ্লেষনাত্মক মতবাদ প্রবক্তাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক সিমেল, অধ্যাপক ফিয়ারকাত, অধ্যাপক ম্যাক্স ওয়েবার প্রমুখ জার্মান সমাজতাত্ত্বিক।


অধ্যাপক সিমেল : 

অধ্যাপক সিমেল বিশ্লেষনাত্মক মতবাদের একজন অন্যতম প্রবর্তক, যিনি সমাজতত্ত্বকে একটি বিশেষ ধরণের সামাজিক বিজ্ঞান বলে মনে করেন। তবে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সমাজতত্ত্বের একটি বিশেষ পার্থক্য আছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তাঁর মতানুসারে বিভিন্ন ধরণের সামাজিক সম্পর্কের শ্রেণীবিভাগ প্রসঙ্গে সমাজতত্ত্ব আলোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ করে।


অধ্যাপক ফিয়্যারকাণ্ড : 

অধ্যাপক মিয়ারকাণ্ড (Alfred Vierkandt) সমাজকে জ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে মূল কাজ হল মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টিকারী বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে আলোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ করা। তিনি আরো বলেন সমাজতত্ত্বের উচিত কোন নির্দিষ্ট সমাজের ঐতিহাসিক পর্যালোচনার ক্ষেত্রে বিরত থাকা।


ম্যাক্স ওয়েবার :

ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এর মতে সামাজিক আচরণবিধি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও অনুধাবন করাই হল সমাজতত্ত্বের অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে মানসিক আচরণগুলিতে সন্নিবিষ্ট হয় না। কেননা মানুষের সকল ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নাগরিক বলে দাবী করা যাবে না।


সমালোচনা :

সমাজতত্ত্বের আলোচ্য ক্ষেত্র ও পরিধি পর্যালোচনায় বিষোত্মক মতবাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ সমালোচনা দেখা যায় :-

a. 

মানব সমাজের ন্যায় একটি অখণ্ড ও সামগ্রিক বিষয়বস্তুকে বিশ্লেষাত্মক মতবাদীরা উপেক্ষা করেছেন। কেননা শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাজের অস্তিত্ব উপলব্ধি করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপের বিজ্ঞান হল সমাজতত্ত্ব।

b.

বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক সিমেল এর বিশ্লেষাত্মক মতবাদের সমালোচনা করেছেন। প্রসঙ্গত জিন্সবার্গ বলেছেন, সামাজিক সম্পর্কের বাহ্যিক দিকের বিমূর্ত আলোচনা যথাযথ নয়। এর দ্বারা কেবলমাত্র বাস্তব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক সম্পর্কের স্বরূপ অবহিত হওয়া যায়।


C.

বিশ্লেষাত্মক মতবাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজতত্ত্বের আলোচ্য ক্ষেত্র সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে, যা সমাজতত্ত্বের মত একটি শাস্ত্রের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেমানান।


) সংশ্লেষাত্মক মতবাদ :

সমাজতত্ত্বের পরস্পর বিরুদ্ধবাদী দুটি মতবাদের অপরটি হল সংশ্লেষণাত্মক মতবাদ, যেখানে সমাজতত্ত্বকে অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের একটি সমন্বিত রূপ হিসেবে ব্যাখ্যা করা। এই মতবাদের অন্যতম প্রবক্তারা হলেন দৃখ্যাইম, হবহাউস, সরোকিন প্রমুখ। প্রসঙ্গতঃ বলা যায়, বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তু স্বতন্ত্র, তবে এইসকল স্বতন্ত্র বিষয়বস্তুগুলির একত্রিত রূপায়ণের মধ্য দিয়ে মানব সমাজের সামগ্রিক রূপটি ধরা পড়ে। এর ফলে সমাজজীবনের অখণ্ডতা উপলব্ধি করা যায়। সমাজতত্ত্বের আলোচনার বিষয়বস্তুগুলি সমাজের ব্যক্তিবর্গের গোষ্ঠীগত জীবনধারা এবং ব্যক্তির নিজস্ব প্রয়োজন পরিপূরণের জন্য বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে বাস্তবায়িত হয়।


উপসংহার : 

সমাজতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়বস্তু এবং পরিধি পর্যালোচনায় নিয়োজিত বিশ্লেষাত্মক এবং সংশ্লেষাত্মক মতবাদ দুটি পরস্পর বিরোধী নয় এবং পরস্পর পরস্পরের পরিপুরক। কারণ সমাজতত্ত্বে সমাজ জীবনের বিশেষ বিশেষ দিকের সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ যেমন প্রয়োজন তেমনি আবার অখণ্ড সমাজের সার্বিক সামাজিক সম্পর্কের সামগ্রিক পর্যালোচনাও অপরিহার্য। তাই সমাজতত্ত্বের আলোচনায় বিষয়বস্তু ও পরিধি নির্ধারণ একান্ত প্রয়োজন।

VISIT- click here - click here

Post a Comment

Previous Post Next Post