সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।

সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর। অথবা সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পার্থক্য। 

সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।

<b>{tocify} $title={Table of Contents}</b>

ভূমিকা :

মরিস জিন্সবার্গের মতে রাজনৈতিক অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে যখন সেই অনুসন্ধান রাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে আরো প্রশস্ত স্তরে পৌঁছায়, তখনই রাষ্ট্র বৈজ্ঞানিক আলোচনায় সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের প্রয়োজন জরুরি হয়ে পড়ে। Broom মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর উপর সমাজতত্ত্বের ক্রমবর্ধমান প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সম্পর্কে T. B. Bottomore (বটোমোর) উল্লেখযোগ্য মতামত রেখেছেন।

Bottomore-এর অভিমত :


বটোমোর এর মতে, সমাজতত্ত্বের প্রভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শালোচনায় সমাজব্যবস্থার অভ্যন্তরে রাজনৈতিক আচার-আচরণের পর্যালোচনা বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। মার্কসবাদী রাষ্ট্রতত্ত্বে আর্থ-সামাজিক এবং রাষ্ট্রনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক পর্যালোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। T. B. Bottomore তাঁর 'Sociology রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর সমাজতত্ত্বের প্রভাবকে দুটি বৃহত্তম পটভূমিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।

প্রথমত :


দেখা যায় সমাজতত্ত্ব থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কিছু বিশ্লেষণী পদ্ধতি বা model এর সরাসরি আমদানী ঘটেছে। এই ধরণের model এর সাহায্যে David Easion তাঁর Political system-কে ব্যাখ্যা করেছেন। এছাড়াও উন্নয়নশীল দেশগুলির বিপ্লব এবং শিল্পোন্নত দেশগুলির সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ধরণের সমাজতাত্ত্বিক চিন্তার প্রবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

দ্বিতীয়ত : 


নতুন ধরণের রাষ্ট্রগুলির বিবর্তন পর্বে যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা পর্যালোচনার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সমাজতাত্ত্বিক, এমনকি নৃতাত্ত্বিক প্রচেষ্টাকে পরস্পর সন্নিবদ্ধ করে তুলেছে। কৃষিভিত্তিক উপজাতি নির্ভর সমাজ কিংবা জাতি ভিত্তিক সমাজে সমাজ সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তুলনায় সমাজ বিজ্ঞান এবং নৃতত্ত্বের গবেষণা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানই সমাজতত্ত্বের ওপর নির্ভর করে তা নয়, কতকগুলি ক্ষেত্র বিশেষে সমাজতত্ত্বকেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে সমাজতত্ত্বের জ্ঞান থাকা বিশেষ প্রয়োজন। এই জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা করা অসম্ভব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সমাজতত্ত্ব থেকেই রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের উৎপত্তি এবং সামাজিক শাসন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ জানতে হলে সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গিডিংস (F. H. Giddings) এর অভিমত উদ্ধৃত করা আবশ্যক। তিনি তাঁর 'Principle of sociology' গ্রন্থে বলেছেন - - “সমাজতত্ত্বের মূল সূত্রসমূহ সম্পর্কে যাঁরা অবহিত নন, তাঁদের রাষ্ট্র সম্পর্কে তত্ত্ব শিক্ষা প্রদান, নিউটনের গতি সম্পর্কিত সূত্রের জ্ঞানরহিত ব্যক্তিকে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার মতই এক অসম্ভব ব্যাপার।

সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে যোগসূত্র : 


সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান দুটি পৃথক বিষয়বস্তুর অন্তর্গত হলেও উভয় উভয়ের পরিপূরক। সমাজতত্ত্ব এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লাভ করেছে। মার্কসবাদী রাষ্ট্রতত্ত্বে আর্থ-সামাজিক এবং রাষ্ট্রনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক পর্যালোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। T. B. Bottomore তাঁর 'Sociology রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর সমাজতত্ত্বের প্রভাবকে দুটি বৃহত্তম পটভূমিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।

প্রথমত :


দেখা যায় সমাজতত্ত্ব থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কিছু বিশ্লেষণী পদ্ধতি বা model এর সরাসরি আমদানী ঘটেছে। এই ধরণের model এর সাহায্যে David Easion তাঁর Political system-কে ব্যাখ্যা করেছেন। এছাড়াও উন্নয়নশীল দেশগুলির বিপ্লব এবং শিল্পোন্নত দেশগুলির সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ধরণের সমাজতাত্ত্বিক চিন্তার প্রবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

দ্বিতীয়ত : 


নতুন ধরণের রাষ্ট্রগুলির বিবর্তন পর্বে যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা পর্যালোচনার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সমাজতাত্ত্বিক, এমনকি নৃতাত্ত্বিক প্রচেষ্টাকে পরস্পর সন্নিবদ্ধ করে তুলেছে। কৃষিভিত্তিক উপজাতি নির্ভর সমাজ কিংবা জাতি ভিত্তিক সমাজে সমাজ সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তুলনায় সমাজ বিজ্ঞান এবং নৃতত্ত্বের গবেষণা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানই সমাজতত্ত্বের ওপর নির্ভর করে তা নয়, কতকগুলি ক্ষেত্র বিশেষে সমাজতত্ত্বকেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে সমাজতত্ত্বের জ্ঞান থাকা বিশেষ প্রয়োজন। এই জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা করা অসম্ভব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সমাজতত্ত্ব থেকেই রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের উৎপত্তি এবং সামাজিক শাসন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ জানতে হলে সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গিডিংস (F. H. Giddings) এর অভিমত উদ্ধৃত করা আবশ্যক। তিনি তাঁর 'Principle of sociology' গ্রন্থে বলেছেন - - “সমাজতত্ত্বের মূল সূত্রসমূহ সম্পর্কে যাঁরা অবহিত নন, তাঁদের রাষ্ট্র সম্পর্কে তত্ত্ব শিক্ষা প্রদান, নিউটনের গতি সম্পর্কিত সূত্রের জ্ঞানরহিত ব্যক্তিকে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার মতই এক অসম্ভব ব্যাপার।

সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে যোগসূত্র : 


সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান দুটি পৃথক বিষয়বস্তুর অন্তর্গত হলেও উভয় উভয়ের পরিপূরক। সমাজতত্ত্ব এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লাভ করেছে। মার্কসবাদী রাষ্ট্রতত্ত্বে আর্থ-সামাজিক এবং রাষ্ট্রনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক পর্যালোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। T. B. Bottomore তাঁর 'Sociology রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর সমাজতত্ত্বের প্রভাবকে দুটি বৃহত্তম পটভূমিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।

প্রথমত :


 দেখা যায় সমাজতত্ত্ব থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কিছু বিশ্লেষণী পদ্ধতি বা model এর সরাসরি আমদানী ঘটেছে। এই ধরণের model এর সাহায্যে David Easion তাঁর Political system-কে ব্যাখ্যা করেছেন। এছাড়াও উন্নয়নশীল দেশগুলির বিপ্লব এবং শিল্পোন্নত দেশগুলির সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ধরণের সমাজতাত্ত্বিক চিন্তার প্রবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

দ্বিতীয়ত : 


নতুন ধরণের রাষ্ট্রগুলির বিবর্তন পর্বে যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা পর্যালোচনার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সমাজতাত্ত্বিক, এমনকি নৃতাত্ত্বিক প্রচেষ্টাকে পরস্পর সন্নিবদ্ধ করে তুলেছে। কৃষিভিত্তিক উপজাতি নির্ভর সমাজ কিংবা জাতি ভিত্তিক সমাজে সমাজ সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তুলনায় সমাজ বিজ্ঞান এবং নৃতত্ত্বের গবেষণা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানই সমাজতত্ত্বের ওপর নির্ভর করে তা নয়, কতকগুলি ক্ষেত্র বিশেষে সমাজতত্ত্বকেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে সমাজতত্ত্বের জ্ঞান থাকা বিশেষ প্রয়োজন। এই জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা করা অসম্ভব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সমাজতত্ত্ব থেকেই রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের উৎপত্তি এবং সামাজিক শাসন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ জানতে হলে সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গিডিংস (F. H. Giddings) এর অভিমত উদ্ধৃত করা আবশ্যক। তিনি তাঁর 'Principle of sociology' গ্রন্থে বলেছেন - - “সমাজতত্ত্বের মূল সূত্রসমূহ সম্পর্কে যাঁরা অবহিত নন, তাঁদের রাষ্ট্র সম্পর্কে তত্ত্ব শিক্ষা প্রদান, নিউটনের গতি সম্পর্কিত সূত্রের জ্ঞানরহিত ব্যক্তিকে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার মতই এক অসম্ভব ব্যাপার।

সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে যোগসূত্র :


সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান দুটি পৃথক বিষয়বস্তুর অন্তর্গত হলেও উভয় উভয়ের পরিপূরক। সমাজতত্ত্ব এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে ক্রমাগত যোগসূত্রের বিষয়টি মার্কসবাদী চিন্তাধারাতেও বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। কারণ মার্কসীয় রাষ্ট্রতত্ত্বে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সামাজিক শ্রেণীর সঙ্গে সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান ও আচার আচরণ বিশ্লেষণ করা হয় এবং তা করা হয় সাধারণত সামাজিক প্রেক্ষাপটে। রাজনীতিক সমাজতত্ত্বের উদ্ভবের পিছনে মার্কসীয় মতাদর্শের অবদান অনস্বীকার্য। এবং তার ফলেই রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক মতাদর্শ, আমলাতন্ত্র, এলিট সম্প্রদায় প্রভৃতি প্রসঙ্গে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পরিলক্ষিত হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে মার্কসীয় চিন্তাধারার পাশাপাশি মিচল, ম্যাক্স ওয়েবার, প্যারিচো প্রভৃতিদের তত্ত্বেও সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে এই যোগসূত্রটি বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া আমেরিকান রাষ্ট্রবৈজ্ঞানিক তত্ত্বে আচরণবাদ সমাজতত্ত্ব ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যোগসূত্রের কথা বলা হয়েছে।

 বিষয়বস্তু স্বাতন্ত্র্য বিদ্যমান :


 সমাজতত্ত্ব এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ঘনিষ্ট এবং আসামী সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলেও এই দুটি বিজ্ঞজ্ঞানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন। - সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু গোটা সমাজকে কেন্দ্র করে। আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয় রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে বলা যায় সমাজতত্ত্ব হল একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বিশেষভাবে জনপ্রিয় একটি সামাজিক বিজ্ঞান এবং অন্য দিকে রাষ্ট্র মানব জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। তাই বৈজ্ঞানিক আলোচনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি স্বাধীন স্থানের অধিকারী। তাই পৃথক সামাজিক বিজ্ঞান হিসাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা সমাজতত্ত্ব কেউই তার নিজস্ব বিষয়বস্তুগত স্বাতন্ত্র্য হারাবে না।

আলোচনার ক্ষেত্রে পার্থক্য :


 সমাজতত্ত্ব ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক সমাজতত্ত্বে সমাজের অন্তর্গত ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় ক্রিয়া-কলাপের বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়। যেমন - মানব সমাজের উদ্ভব, বিকাশ, মানুষের সামাজিক প্রেক্ষাপট, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় জীবন প্রভৃতি বিভিন্ন দিকের আলোচনাই হল সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু। তাই সমাজতত্ত্বের উপজীব্য বিষয় হল মানুষের সামাজিক জীবনধারণের সর্বোতমুখী আলোচনা। এই কারণে সমাজতত্ত্বের আলোচনার পরিধি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী সম্প্রসারিত। প্রকৃত প্রস্তাবে সমাজতত্ত্ব হল একটি মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান। অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকে সমাজবদ্ধ মানুষের রাষ্ট্রনৈতিক জীবন এবং রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ ও পর্যালোচনার মধ্যে। সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল একটি বিশেষ স্বীকৃত বিজ্ঞান। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার পরিধি ব্যাপক ও বিস্তার কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার পরিধি সীমাবদ্ধ।

দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে পার্থক্য : 


রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গীর ক্ষেত্রে পার্থক্য বর্তমান রয়েছে। এই দুটি শাস্ত্র সম্পূর্ণ পৃথক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মানব জীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপের পর্যালোচনা করে। সমাজতত্ত্ব মানুষের সামাজিক জীবনে পরিণত হওয়া কার্যকলাপের পর্যালোচনা করে। সমাজতত্ত্ব মানুষের সামাজিক জীবনে পরিণত হওয়া সম্পর্কে আলোচনা করে। কিন্তু অপরদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মানুষকে রাষ্ট্রনৈতিক জীব হিসেবে ধরে নেওয়া হয় এবং সেই অনুসারে মানুষের আচার আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। সমাজতত্ত্বের আলোচনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র হল একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা সংঘমাত্র । অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রকে মানব সমাজের মূখ্য নিয়ন্ত্রক শক্তি ও আইনের উৎস বলে মনে করে। এক্ষেত্রে অধ্যাপক গিডিংস (F. H. Giddings) এর মতানুসারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের গবেষণাক্ষেত্র স্বতন্ত্র।

উপযোগিতাগত পার্থক্য :


সমাজতত্ত্ব এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে উপযোগিতাপ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অনেকের অভিমত অনুসারে সমাজতত্ত্বের আলোচনা হল মূল তাত্ত্বিক। অপরপক্ষে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা হল বহুলাংশে ব্যবহারিক। এই কারণে অনেকে উপযোগিতার বিচারে সমাজতত্ত্বকে একটি তাত্ত্বিক বিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেন। তাছাড়া অনেকে আবার সমাজতত্ত্বকে “বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে 'আদর্শনিষ্ট বিজ্ঞান' হিসাবে প্রতিপন্ন করার পক্ষপাতী। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকের অভিমত অনুসারে সমাজতত্ত্বে তথ্যের আলোচনাকে মূল্যমানের আলোচনা থেকে সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র করা সম্ভব নয়।

উৎপত্তিগত বিচারে পার্থক্য : 


ইতিহাসের ক্ষেত্র বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়। সমাজতত্ত্বের অনেক পরে সৃষ্টি হয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের। অর্থাৎ সমাজ জীবনের সূত্রপাত থেকে সমাজতত্ত্বের সৃষ্টি হয়েছে এবং তারপর রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের সূত্রপাত থেকে সৃষ্টি হয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড্যানিং (Duning) এর মতবাদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । তিনি বলেন জাতির জীবনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার সূত্রপাত ঘটেছে সমাজতত্ত্বের অনেক পরে। আপাতদৃষ্টিতে সমাজতত্ত্ব ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও কার্যক্ষেত্রে উভয়ে উভয়ের পরিপূরক। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রতত্ত্বের পর্যালোচনা করলে দেখা যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্ব এই দুটি সামাজিক বিজ্ঞান পরস্পরের উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ উভয় শাস্ত্রই পরস্পরের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। সাম্প্রতিককালে সমাজতত্ত্বের অনুশীলন দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছে। তাছাড়াও সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আচরণবাদে গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আচরণবাদের মূল বক্তব্য হল শুধুমাত্র শাসনব্যবস্থার অভ্যন্তরে আলোচনাকে সীমাবদ্ধ না রেখে মানুষের সার্বিক উদ্দেশ্যাবলী, মনোভাব এবং রাজনৈতিক আচার আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির দিকে রাষ্ট্রনৈতিক পর্যালোচনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্রনৈতিক সমাজতত্ত্বের আবির্ভাব ঘটেছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে এই ধরণের ঘনিষ্ট সংযোগ সম্পর্কের পরিপেক্ষিতে একটি যৌথ অধিকারের ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post