সম্প্রদায় ও সংঘের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।


<b>{tocify} $title={Table of Contents}</b>

সম্প্রদায় ও সংঘের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।


ভূমিকা : 

একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে দীর্ঘকাল যাবৎ বসবাস করতে থাকলে সেই অঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে অভিন্ন চিন্তা-ভাবনা, সামাজিক বিষয়গুলিতে অভিন্নতা, ঐতিহ্যগত অভিন্নতা, গভীর সংযোগ সম্পর্ক প্রভৃতি দেখা দেয়। নির্দিষ্ট অঞ্চলে একটি জনগোষ্ঠীর এইভাবে সুসংহত সামাজিক জীবনযাপন সূত্রে সৃষ্টি হয় জনসম্প্রদায়ের। অধ্যাপক ম্যাকাইভার ও পেজের মতে - জনসম্প্রদায়ের ভিত্তি হিসেবে দুটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়। এই দুটি বিষয় ল – ক) অঞ্চল এবং খ) সমষ্টিগত মানসিকতা।


সম্প্রদায় বা জনসম্প্রদায় : 

জনসম্প্রদায়ের ধারণার সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের ধারণা ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত। অর্থাৎ একটি জনসম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গ সবসময়েই একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করে। মানব সম্প্রদায়ের বিকাশের ধারায় যেমন গ্রামের মত ক্ষুদ্র জনসম্প্রদায় পরিলক্ষিত হয়, তেমনি একটি দেশের মত বৃহদায়তনের জনসম্প্রদায়ও দেখা যায়। সাম্প্রতিকালে মানুষের চিন্তা ভাবনার 'বিহু জনসম্প্রদায়' এর রূপরেখার অস্তিত্ব সংঘ অন্যদিকে সংঘ বলতে বোঝায় সমাজে অবস্থিত এক বিশেষ ধরণের গোষ্ঠী। সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গ নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গোষ্ঠীবদ্ধভাবে জীবনযাপন পরিলক্ষিত হয়। করে এবং পরস্পরের সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য একটি গোষ্ঠী সংঘটিত হতে পারে। এই রকম ক্ষেত্রে গড়ে ওঠে সংঘ।


সংঘ সম্পর্কে অধ্যাপক জিসবার্ট-এর মত :

 অধ্যাপক জিসবার্ট তাঁর 'Fundamentals of sociology' শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন – “সংঘ গড়ে ওঠে কতকগুলি গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য।” যাই হোক, এই সংঘ আকৃতিতে ছোট হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। একটি সংঘের এক বা একাধিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তবে সংঘের সদস্যদের উদ্দেশ্য সমজাতীয় হবে।


সংঘ ও সম্প্রদায়ের পার্থক্য :

১) পরিধিগত পার্থক্য : 

সংঘের তুলনায় জনসম্প্রদায়ের পরিধি বিস্তর। একটি জনসম্প্রদায়ের মধ্যে একাধিক সংঘের অস্তিত্ব বর্তমান থাকে। কিন্তু এমন সংঘও দেকা যায় যেখানে জনসম্প্রদায়ের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় না। অর্থাৎ সংঘ হল জনসম্প্রদায়ের একটি সংস্থা যার মধ্যে দিয়ে জনসম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করে। তাই জনসম্প্রদায়ের মধ্যে একাধিক সংঘের অস্তিত্ব দেখা যায়।


২) উদ্ভবের ক্ষেত্রে পার্থক্য :

 জনসম্প্রদায় সৃষ্টি হয় দীর্ঘদিন একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসের ভিত্তিতে। অর্থাৎ জনসম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় পর্যায়ক্রমে। হঠাৎ করে জনসম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে না। কিন্তু অপরদিকে সমাজবদ্ধ মানুষ তাদের কৃত্রিম কিছু উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য হঠাৎ করে সংঘের উদ্ভব ঘটাতে পারে। তাই এদিক দিয়ে বিচার করলে সংঘ হল কৃত্রিম এবং জনসম্প্রদায় হল স্বাভাবিক। স্বাভাবিকভাবেই জনসম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে।


৩) মানসিকতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :

 জনসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যক্তিবর্গ বসবাসের ভিত্তিতে এবং অভিন্ন আচার-আচরণ, রীতি-নীতি প্রভৃতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে জনসম্প্রদায়গত মানসিকতা। অন্যদিকে সংঘের অস্তিত্ব থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। ফলে এই ক্ষেত্রে ‘আমরাবোধ' মানসিকতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু জনসম্প্রদায়ের মধ্যে 'আমরাবোধ' এই মানসিকতা বর্তমান থাকতে দেখা যায়। ৪) স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য । জনসম্প্রদায় স্থায়ী প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে সংঘ স্থায়ী প্রকৃতির হয় না। জনসম্প্রদায়ের সদস্যরা কোন বিশেষ স্বার্থের জন্য জনসম্প্রদায় গড়ে তোলে সাধারণ জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজনের অংশীদার হিসেবে জনসম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত থাকে। অন্যদিকে সংঘ কতকগুলি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গড়ে তোলা হয়। উদ্দেশ্য ফুরিয়ে গেলে এদের অস্তিত্ব বজায় থাকে না। সুতরাং দেখা যায় জনসম্প্রদায়ের স্থায়ীত্ব স্বল্পকালীন হয়। मा


৫) সদস্যপদ গ্রহণে পার্থক্য : 

জনসম্প্রদায়ের সদস্য হওয়া ব্যক্তির ক্ষে ত্রে অপরিহার্য। কারণ ব্যক্তি জনসম্প্রদায়ের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেও প্রাথমিক প্রয়োজনগুলি জনস প্রদানেই। পূরণ হয়, তাই প্রতিটি ব্যক্তি কোন না কোন জনসম্প্রদায়ের সদস্য। অন্যদিকে সংঘের সদস্য হওয়া বা না হওয়া পুরোপুরি নির্ভর করে ব্যক্তির নিজের ইচ্ছার উপর। বিশেষ উদ্দেশ্য। পুরণের জন্য ব্যক্তি সংঘের সদস্যপদ গ্রহণ করে থাকে। একজন ব্যক্তি একাধিক সংঘের সদস্য হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি জনসম্প্রদায়ের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করে তাই জনসম্প্রদায়ের সদস্য হতেই হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তি ইচ্ছা নির্ভর করে না। কিন্তু সংঘের সদস্য হওয়া পুরোপুরি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন।


৬) স্বয়ংসম্পূর্ণতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :

 পরস্পর নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে কতকগুলি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সংঘগুলির সৃষ্টি। সংঘের উদ্দেশ্য নিরপেক্ষ নয়, সেগুলি একে অপরের উপর নির্ভরশীল। তাই সংঘের সংস্থা হিসেবে সমস্ত জনসম্প্রদায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।


(৭) গঠনগত দিক থেকে পার্থক্য :

গঠনগত দিক থেকে সম্প্রদায় এমনই একটি প্রেক্ষাপক্ষে অবস্থান করে, যেখানে অন্য সম্প্রদায়ের পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষার কোন বিশেষ সুযোগ থাকে না। সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকে না। অন্যদিকে সংষের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন বর্তমান থাকে। একটি সংঘ অন্যান্য সংঘের সঙ্গে পারস্পরিক গভীর সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, তাছাড়া একটি সম্প্রদায়ের সঙ্গে অপর সম্প্রদায়ের সংঘাত হতে পারে কিন্তু একটি সমিতির সঙ্গে অন্য সমিতির সংঘাতের সম্ভাবনা অনেক কম।


(৮) কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্থক্য : 

সংঘ একাধিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গড়ে উঠে। ফলে সংঘের কার্য পরিচালনার জন্য পরিচালকমণ্ডলীর প্রয়োজন হয়। এই পরিচালকমণ্ডলী সংঘের কাজকর্ম দেখাশোনা করে। কিন্তু জনসম্প্রদায়ের কোন পরিচালকমণ্ডলীর প্রয়োজন হয় না। তাই কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে সংঘ ও জনসম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।


মন্তব্য : 

জনসম্প্রদায় এবং সমিতির মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও বিস্তর কোন পার্থক্য নেই। সাম্প্রতিককালে আধুনিকতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রয়োজন বৃদ্ধি ঘটায় একাধিক সংঘের সৃষ্টি হয়েছে। জনসম্প্রদায় ও সংঘ উভয়ই সমাজমুখী মানবীয় সামাজিক সংগঠন হিসাবে উভয়ের অস্তিত্ব বর্তমান। নতুন নতুন প্রয়োজনীয়তাকে চরিতার্থ করতে নতুন নতুন সমিতির প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে। তাই ব্যক্তি জনসম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একাধিক সংঘে যোগদান করতে দেখা যায়। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা যতই জটিল হচ্ছে ততই কার্যধারাগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যক্তি সংঘের প্রতি ক্রমশ আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।

VISIT- click here - click here




Post a Comment

Previous Post Next Post