সমাজতত্ত্ব এবং সমাজ - Sociology And Society

সমাজতত্ত্ব এবং সমাজ - Sociology And Society


সমাজতত্ত্ব এবং সমাজ - Sociology And Society 

ভূমিকা :


তোমাদের মতো নবীন ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু ধারণা দিয়ে শুরু করা যাক্। প্রায়শই একটি উপদেশ দেওয়া হয়, “কঠোরভাবে পড়াশুনা কর এবং তুমি জীবনে ভালো থাকবে।” দ্বিতীয় উপদেশ যেটা প্রায়শই দেওয়া হয়, “তুমি যদি এই বিষয় বা বিষয়গুলোর বিভিন্ন দিক নিয়ে পড়াশোনা করো, তাহলে ভবিষ্যতে তুলনামূলকভাবে ভালো চাকরির সুযোগ পাবে।” তৃতীয়টি বলতে হয়, “যেহেতু তুমি একটি ছাত্র, বিষয় হিসাবে মনে হয় না এটি সঠিক নির্বাচন” অথবা “ছাত্রী হিসাবে তুমি কি মনে করো তোমার বিষয় নির্বাচন বাস্তবসম্মত ? চতুর্থটি, “তোমার পরিবারের কাছে তোমার একটি চাকরি বা কাজ খুবই প্রয়োজন, তবু কেন এমন একটি পেশা নির্বাচন করলে, যার জন্যে দীর্ঘ সময় লাগবে” অথবা “তোমার পারিবারিক ব্যবসায় যোগদান করতে কেন এই বিষয়ে পড়তে চাইছো ?

ধারণাগুলো এবার পরীক্ষা করা যাক । তুমি কি মনে কর প্রথম উপদেশটি অন্য তিনটি উপদেশকে অস্বীকার করে? প্রথম উপদেশটি ধারণা দেয় যে যদি তুমি খুব কঠোরভাবে পড়াশোনা কর তাহলে তুমি খুব ভালো থাকবে এবং ভালো চাকরি পাবে। দায়িত্বটি ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। দ্বিতীয় উপদেশটি ধারণা দেয় যে, ব্যক্তি প্রচেষ্টার বাইরে যে চাকরির বাজার আছে, তা স্থির করে দেয় কোন বিষয় নির্বাচন চাকরি বাজারে তোমার সুযোগের হ্রাস বা বৃদ্ধি করবে। তৃতীয় এবং চতুর্থ উপদেশটি বিষয়টিকে আরো জটিল করে তোলে। এটা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা নয় বা চাকরির বাজার নয় যা পার্থক্য টা দেখায় – আমাদের লিঙ্গ এবং পরিবার অথবা সামাজিক পঠভূমিও।

ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা একটি বৃহৎ ব্যাপার, কিন্তু আবশ্যিকভাবে পরিণত বা ফলাফলকে সংজ্ঞায়িত করে না। যেহেতু আমরা দেখি সেখানে অন্যান্য সামাজিক উপাদানগুলোও আছে যা চরম ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে আমরা উল্লেখ করেছি চাকরির বাজার’, ‘আর্থ-সামাজিক পঠভূমি’, এবং ‘লিঙ্গ'। তুমি কি অন্যান্য উপাদানের কথা মনে করো ? আমরা জানতে চাইবো, “কোন্‌টা ভালো চাকরি কে স্থির করে দেবে ?” কোটা “ভালো চাকরি” সব সমাজেই কি অনুরুপ খেয়াল বা ধারণা আছে? অর্থই কি বিচারের মান বা নীতি? অথবা এটা কি সম্মান, সামাজিক স্বীকৃতি, বা ব্যক্তিগত পরিতৃপ্তি যা চাকরির মূল্যকে স্থির করে দেয়? কৃষ্টি এবং সামাজিক নিয়মের কি কোনো ভূমিকা আছে?

ভালোভাবে থাকতে প্রত্যেকটি ছাত্র অবশ্যই কঠোরভাবে পড়াশোনা করবে। কিন্তু সামাজিক উপাদানগুলো তাদের কতখানি ভালোভাবে গড়ে তোলে। চাকরির বাজার অর্থনীতির প্রয়োজনের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়।

সরকারের অনুসৃত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতির দ্বারা আর্থিক পরিচালনা স্থিরীকৃত হয়। প্রত্যেকটি ছাত্র বা ছাত্রীর সুযোগ এই উভয় বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমাণ এমনকি তার পরিবারে 16/116 ঈ পটভূমি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ইহা প্রারম্ভিক চেতনা দেয় যে সমাজতত্ত্ব কীভাবে মানব সমাজকে একটি অন্তঃ সম্পর্কিত সমষ্টি হিসাবে আলোচনা করে। এবং কীভাবে সমাজ এবং ব্যক্তি পরস্পরের উপর ক্রিয়া করে। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিষয় নির্বাচনের সমস্যা প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর জন্যে একটি ব্যক্তিগত ঝঞ্ঝাট বা হয়রানির উৎস। এটা হল একটি সর্ব সাধারণের বিচার্য বিষয় যা একটি যৌথ অস্তিত্ব হিসাবে ছাত্রছাত্রীদের প্রভাবিত করে নিজেই স্পষ্ট বা প্রতীয়মান। সমাজতত্ত্বের একটি কাজ হল জনসাধারণের বিচার্য বিষয় এবং ব্যক্তিগত সমস্যার মধ্যে অন্তঃ সম্পর্কগুলো তুলে ধরা। এটাই হল এই অধ্যায়ের প্রথম প্রতিপাদ্য বিষয় ।

আমরা আগেই দেখেছি যে, একটি 'ভালো চাকরি ভিন্ন সমাজে ভিন্ন জিনিস বা স্বতন্ত্র বিষয়ে বোঝায়। সামাজিক সম্মান যা নির্দিষ্ট ধরনের চাকরির সংগে যুক্ত আছে অথবা ব্যক্তির সংগে যুক্ত নয়, নির্ভর করে ছেলের বা মেয়ের ‘প্রাসঙ্গিক সমাজের’ কৃষ্টি বা সংস্কৃতির উপর। আমরা ‘প্রাসঙ্গিক সমাজ' বলতে কি বুঝি? ব্যক্তি যে সমাজের অন্তর্গত তাকেই কি বোঝায়? ব্যক্তি কোন সমাজের অন্তর্গত ? এটা কি প্রতিবেশিত্ব ? এটা কি সম্প্রদায়? এটা কি জাতি বা উপজাতি? এটা কি পিতা বা মাতার পেশাগত বৃত্ত বা পরিধি? এটা কি জাতি (nation) ? দ্বিতীয়ত, এই অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে আধুনিক সময়ে প্রত্যেকটি ব্যক্তি কীভাবে একাধিক সমাজের অন্তর্গত এবং সমাজগুলো কিভাবে অসম। তৃতীয়ত, এই অধ্যায় সমাজকে একটি গঠনতান্ত্রিক আলোচনা হিসাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে, যা ধর্মীয় এবং দার্শনিক প্রতিফলন থেকে আলাদা এমনকি সমাজ সম্পৰ্কীয় প্রাত্যহিক ধারণার পর্যবেক্ষণ থেকেও আলাদা। চতুর্থত, সমাজ সম্পর্কীয় আলোচনার স্বতন্ত্র্য দিকটি আরো সুন্দরভাবে বোঝা যাবে যদি আমরা বৌদ্ধিক ধ্যান-ধারণা ও পার্থিব বিষয়ের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই যাব মধ্যেই সমাজতত্ত্বের জন্ম ও পরবর্তী কালে তার বিকাশ এই সকল ধারণা ও পার্থিব বিকাশ মূলতঃ পাশ্চাত্যের কিন্তু বিশ্বব্যাপী পরিণতি বা ফলাফলের সংগে যুক্ত। পঞ্চমত, আমরা দেখি ভারতবর্ষের সমাজতত্ত্ব বিশ্বব্যাপী দিক এবং রীতিনীতি থেকেই উদ্ভূত। এটা মনে করা গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের প্রত্যেকের একটি চরিতকথা বা জীবনকথা আছে, যা একটি বিষয়েরও থাকে। কোনো বিষয়ের ইতিহাস সেই বিষয়কে বুঝতে সাহায্য করে। শেষত, সমাজতত্ত্বের পরিধি এবং অন্যান্য বিষয় বা বিজ্ঞানের সংগে সম্পর্ক আলোচনা করা হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post