ভূমিকা :
কৃষিসমাজ কৃষিকে কেন্দ্র করেই যে সমাজে মানুষের মূল অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টা পরিচালিত হয় তাকে বলা হয় কৃষি সমাজ। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাস কৃষিকার্য ও কৃষি সভ্যতার সূচনা হয়েছে খাদ্য আহরণ ও পশুপালন যুগের পরবর্তী পর্যায়ে। মানব সমাজের ক্রমবিবর্তনের ধারার শিল্পসভ্যতার আবির্ভাব ঘটেছে আরও অনেক পরবর্তীকালে। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এখনও কৃষি সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত।
কৃষি সমাজের বৈশিষ্ট্য :
ক) গ্রামীণ জনসম্প্রদায় :
গ্রামীণ জনসম্প্রদায়ের অস্তিত্ব কৃষি সমাজের এক অপরিহার্য অঙ্গ। কৃষিজীবী জনসম্প্রদায় তাদের গ্রামের মধ্যেই তাদের জীবন অতিবাহিত করে। কৃষিজীবীদের কাছে গ্রাম বসবাসের একটি ক্ষেত্র মাত্র নয়, এই গ্রামের ভিত্তিতে তাদের সামাজিক সংহতিরও অভিব্যক্তি ঘটে। কৃষিজীবীরা সাধারণত কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি বসবাস করে। এইভাবে গড়ে ওঠা গ্রামীণ জনসম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণী ও গোষ্ঠীর অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়।
খ) কৃষিভিত্তিক সমজাতীয় বৃত্তি :
কৃষি সমাজ ব্যবস্থায় গরু, মোষ শূকর, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি গৃহপালিত পশুর রক্ষণাবেক্ষণর সঙ্গে কৃষিকার্য ওতপ্রোত ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই কারণে কৃষি সমাজে চাষ আবাদের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণতঃ পশুপালনও করা হয়ে থাকে। অন্যান্য অর্থনৈতিক উদ্যোগও কৃষি সমাজে দেখা যায়। এদের মধ্যে তাঁতি, কামার, চামার, ছুতোর প্রভৃতি সম্প্রদায়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথম শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ নিজেরা চাষ আবাদ করেন না। তাঁরা হলেন জমিজমার মালিক। তারা পারিশ্রমিক প্রদানের মাধ্যমে দিন মজুরকে দিয়ে চাষ আবাদের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করে। তারা নিজেরা চাষের কাজ তদারকী করে। যারা চাষী তারা নিজেদের জমিতে নিজেরাই পরিশ্রম করে। কৃষি সমাজে অন্যান্য শ্রেণীর অনেক মানুষ বসবাস করে। যেমন – মেথর, চৌকিদার, দোকানদার প্রভৃতি।
গ) আমরাবোধ মানসিকতা :
কৃষি সমাজের সদস্যদের মধ্যে সাধারণতঃ গভীর ঐকা ও সংহতির অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে 'আমরাবোধ' বর্তমান থাকে। কৃষি সমাজের অধিবাসীদের মধ্যে একটা অন্তগোষ্ঠী বোধ বর্তমান থাকে।